স্মার্টফোনেই দূর্দান্ত ছবি তোলার টিপস

স্মার্টফোনেই  দূর্দান্ত ছবি তোলার টিপস

এখন স্মার্টফোনেই হয়ে যায় ক্যামেরার কাজ। আর তাই স্মার্টফোনের ক্যামেরার প্রতি বিশেষ নজরও দিয়ে থাকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে খানিকটা কলাকৌশল জানলেই তোলা যাবে চমৎকার সব ছবি। স্মার্টফোনে ছবি তোলার কিছু কৌশল জেনে নিন আজ-

 

সঠিক ফ্রেমিং-

প্রতিটি ক্যামেরা অ্যাপেই ‘গ্রিড’ নামে একটি অপশন দেওয়া থাকে। অথচ এটির সঠিক ব্যবহার অনেকেই করে না। ছবি দৃষ্টিনন্দন করার জন্য বলা হয়ে থাকে, ফ্রেমের অন্তত এক-তৃতীয়াংশজুড়ে থাকতে হবে ছবির বিষয়বস্তু, অথবা সর্বোচ্চ দুই-তৃতীয়াংশ। এ ছাড়া বিষয়বস্তুর অবস্থান ঠিক মাঝখানে না হয়ে অল্পবিস্তর একপাশে হলে সবচেয়ে ভালো হয়। বিষয়বস্তুর অবস্থান ঠিক করার জন্য প্রথমে ক্যামেরা অ্যাপে গ্রিড অপশন চালু করতে হবে। এরপর গ্রিডের লাইনগুলো যেখানে মিলিত হবে, সেখানে ছবির বিষয়বস্তু রাখতে হবে। একাধিক বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রেও একইভাবে এসবের অবস্থান নির্ধারণ করা যেতে পারে।

 

আলোর সঠিক ব্যবহার-

ছবি বা ভিডিও—দুটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত আলো। স্মার্টফোনে ব্যবহৃত ক্যামেরার আকার আমাদের চোখের চেয়েও ছোট, তাই অল্প আলোতে মানসম্মত ছবি তোলা সম্ভব হয় না। চেষ্টা করতে হবে যতটুকু সম্ভব উজ্জ্বল আলোতে ছবি তোলার, সেটি ঘরের সব আলো জ্বেলেই হোক বা জানালার পর্দা সরিয়ে। ঘরের বাইরে ছবি তোলার ক্ষেত্রে সাধারণত আলোর সমস্যা দেখা যায় না, শুধু খেয়াল রাখতে হবে ক্যামেরার সামনে যেন সরাসরি সূর্য বা উজ্জ্বল লাইট বাল্ব না পড়ে। এ ছাড়া দিনের বিশেষ সময়ের ‘গোল্ডেন লাইট’ ব্যবহার করে উন্নতমানের পোর্ট্রেট তোলা সম্ভব, যা পাওয়া যাবে ভোর এবং গোধূলিবেলায়। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো সমাধান, একটি ছোট সফটবক্স লাইট সঙ্গে রাখা। সেলফির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে রিং লাইট, যা বাজারে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।

 

ম্যানুয়াল মোড-

বেশির ভাগ নির্মাতাই আজকাল ক্যামেরা অ্যাপে আলাদাভাবে প্রতিটি সেটিং নির্ধারণ করার জন্য ম্যানুয়াল মোড দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে ক্যামেরার ফোকাস, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বা আইএসও এবং কতক্ষণ এক্সপোজার হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, এর মাধ্যমে লং এক্সপোজার ছবি, লাইট পেইন্টিংয়ের মতো কঠিন শটও নেওয়া সম্ভব। ম্যানুয়াল মোডের অন্যতম ব্যবহার হচ্ছে অল্প আলোতে আইএসও কমিয়ে এক্সপোজার বাড়িয়ে শট নেওয়া। আইএসও কমিয়ে দেওয়ায় ছবিতে নয়েজ কমে যাবে বহুগুণ। এ ছাড়া ফোকাস নির্ধারণ করে নেওয়া যাবে বোকেহ শট, এক্সপোজার কমিয়ে-বাড়িয়ে ছবির ডিটেইল একেবারে মনের মতো করে তোলাও সম্ভব।

 

অন্যান্য ক্যামেরা অ্যাপ-

ফোনের নিজস্ব ক্যামেরা অ্যাপের বাইরেও অন্যান্য ক্যামেরা অ্যাপ ব্যবহার করে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। বেশ কিছু বিউটিফিকেশন অ্যাপের মধ্যেই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া আছে ‘ওপেন ক্যামেরা’, ‘হেজ ক্যামেরা ২’ এবং ‘বেকন ক্যামেরা’র মতো অ্যাপ, যেগুলো ক্যামেরার আরো কিছু সেটিংস ঠিক করার অপশন দেবে, যা বিল্ট-ইন ক্যামেরায় না-ও থাকতে পারে। তবে এসব অ্যাপের মূল আকর্ষণ হচ্ছে ভিডিও করার জন্য প্রচুর সেটিংসের সুবিধা। ভিডিওর রেগুলেশন ইচ্ছামতো সেট করা, ভিডিওর ফ্রেমরেট নির্দিষ্ট করে দেওয়া, ছবির মান ঠিক রাখার জন্য বিটরেট বাড়ানোর মতো অপশন সাধারণত ফোনে থাকা ক্যামেরা অ্যাপে পাওয়া যায় না।

 

জুম ব্যবহার-

বেশির ভাগ ফোনের ক্যামেরায়ই অপটিক্যাল জুম অপশনটি দেওয়া হয় না, তার বদলে থাকে ডিজিটাল জুম। এ পদ্ধতিতে ক্যামেরা অ্যাপ শুধু ছবির মাঝ বরাবর ক্রপ করতে থাকে, যার ফলে বিষয়বস্তু কাছাকাছি চলে এসেছে মনে হলেও ছবির রেগুলেশন অনেক কমে যায়। ফলে জুম করে তোলা ছবিতে ডিটেইলের চরম অভাব দেখা দেয়। তাই ফোনে ছবি তোলার সময় জুম ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত, তার চেয়ে ছবি তোলার পর প্রয়োজনীয় অংশ ক্রপ বা কেটে নিলে ডিটেইল আরো ভালো পাওয়া যাবে।

 

প্যানোরামা ও বার্সটমোড-

অনেক সময় একটি বিস্তীর্ণ এলাকার ল্যান্ডস্কেপ ছবি বা বেশ কাছ থেকে বড় গ্রুপের শট নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ফোনের ক্যামেরার ফ্রেমে পুরোটুকু ধারণ করা সম্ভব হয় না। সেই সমস্যার জন্য আছে প্যানোরামা শট। এটি আগে শুধু ডানে বা বামে ছবির পরিধি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা গেলেও, আজকাল প্যানোরামা ওপরে-নিচে বা চারপাশেই ক্যামেরার ফ্রেম বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা যায়। প্যানোরামা ব্যবহার করে একেবারে কাছে দাঁড়িয়েও বড় দৃশ্যপটের ছবি তোলা যেতে পারে। দ্রুত চলমান বিষয়বস্তু, যেমন—শিশুদের খেলাধুলার ছবি তোলার জন্য বার্সটমোড খুবই কাজের। অত্যন্ত দ্রুত একাধিক ছবি তোলার ফলে অন্তত একটি মানসম্পন্ন শট পাওয়া যাবেই, সেটি যত চঞ্চল শিশুরই হোক না কেন।

 

ফোন স্থির রাখা-

যে যন্ত্রই ছবি বা ভিডিওর জন্য ব্যবহার করা হোক না কেন, সেটি স্থির রাখাই মানসম্মত শটের মূলমন্ত্র। আজকাল বাজারে ফোনের জন্য স্বল্পমূল্যের ট্রাইপড পাওয়া যাচ্ছে, সঙ্গে আছে মনোপোড বা সেলফি স্টিকও। এগুলো ব্যবহার করে মনের মতো ফ্রেমিং করার পাশাপাশি একেবারে স্থির রেখে ভিডিও ধারণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া যারা ভিডিওগ্রাফি করতে চায়, তাদের জন্য আছে গিম্বল।

 

 

 

 

সুত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ

ছবিঃ সংগৃহীত