আর্ট দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছেন যারা
আমাদের পৃথিবীতে সাধারন মানুষের ভীড়ে অসাধারন কিছু মানুষও আছেন যারা অন্যকে অনুপ্রেরনা এবং উৎসাহ যোগাতে ভালবাসেন। এই আর্টিস্টরা নিজেদের আর্ট দিয়ে পৃথিবীকে আরো সুন্দর করে তুলতে চান, বদলে দিতে চান। এমন কিছু আর্টিস্টের কথাই জানাবে আজ।
১. জার্মান ক্রু-
১৩ জন আর্টিস্ট নিয়ে জার্মান ক্রু একটি দল। পালমিতা শহরের কর্তৃপক্ষ, শহরের নোংরা, মলিন বাড়ীগুলো রং করানোর জন্যে তাদের আমন্ত্রন জানান। আর্টিস্টদের ২০,০০০ বর্গমিটার স্থান কে ক্যানভাস হিসেবে দেয়া হয়েছিল।
এই পুরো কাজটি করতে আর্টিষ্টদের সময় লেগেছিল ৫ মাস, কারন তাদের কে ২০৯ টি বাড়ী নিয়ে কাজ করতে হয়েছে যেখানে ১ হাজার ৮ শত ৮জন লোকের বসবাস। পেইন্ট করা হয়েছিল রংধনুর রঙে। সেখানকার অধিবাসীরা এটাকে বেশ পজিটিভ হিসেবেই গ্রহন করেছিল। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো, এই উজ্জ্বল রঙের পেইন্টিংয়ের পর শহরের অপরাধের মাত্রা কমে গিয়েছে। সূচক অনুযায়ী সেটা এখন শূণ্য।
২. প্যাট্রিক কমেসি-
ফ্রেঞ্চ আর্টিস্ট প্যাট্রিক কমেসি এবং তার দল মিলে বিল্ডিংয়ের দেয়ালগুলোতে রিয়্যালস্টিক গ্রাফিতি আকেনঁ। তারা মলিন কোন বাড়ী খুজে পেলেই নিজেদের রংয়ের বোতল আর ব্রাশ হাতে তুলে নেন সাধারন রাস্তাগুলো কে গ্যালারি বানিয়ে তোলেন আর মলিন, অনাকর্ষক বাড়ীগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলেন। কমেসি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ইল্যুশন তৈরি করেন তার আকাঁ দিয়ে।
৩. জেফ হ্যানসন-
ছোটবেলায় ব্রেইন টিউমারের কারনে তিনি প্রায় অন্ধ হয়ে যান। তার কেমেথেরাপি চলাকালীন সময়ে মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি আর্টের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। জেফ হ্যানসন শুধু বড় বস্তুর রংয়ের পার্থক্যগুলো ধরতে পারতেন, তাই তিনি তার কাজের জন্য নিজস্ব একটি স্টাইল তৈরি করে নেন। ২১ বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত আর্টিস্ট হিসেবে নাম করেন। বর্তমানে তার পেইন্টিংয়ের গড় দাম ৪ হাজার ডলার। কারন তার পেইন্টিং ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট এবং এলটন জনের মতো নামকরা গায়করা সংগ্রহ করেন।
তিনি ১৯ বছর বয়সে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ২০ বছর বয়সে তিনি দাতব্য কাজে ১ মিলিয়ন ডলার দান করবেন, এবং তিনি সেটা করেছিলেন। তিনি বর্তমানে প্রায় ১০০ বেশী দাতব্য কাজের সাথে জড়িত আছেন।
৪. অ্যাগনেস কাসপারকোভা-
তিনি ৯১ বছর বয়স্ক একজন স্ট্রিট আর্টিস্ট।
একদিন ঠিক করলেন চেক রিপাবলিকের তার ছোট গ্রাম লুকা কে তিনি অসাধারন এবং আকর্ষনীয় করে তুলবেন। গত ৪০ বছর ধরে প্রতি গ্রীষ্ম এবং বসন্ত কালে, গ্রামের বাড়ীগুলোর দেয়াল একে তিনি সুন্দর করার কাজ করেন। মজার বিষয় হলো, অ্যাগনেস আকাঁর আগে কিছু চিন্তা করেন না এবং শুরুতে তিনি নিজেও জানেন না, আকাঁর কাজটি শেষ করার পর সেটি কেমন দেখাবে।
৫. রবার্তো মামানি মামানি-
রবার্তো মামানি মামানি একজন বলিভিয়ান আর্টিস্ট এবং তার কাজ আইমারা আদিবাসী ট্রাডিশন এবং প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রবার্তো কে তার দাদী শিখিয়েছিলেন যে কোন জাতির সম্পর্কে অন্যকে ধারনা দিতে এবং স্মরণীয় করে রাখার জন্যেূ পেইন্টিং কতো গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম হতে পারে। তার মতে দরিদ্র মানুষের ঘরগুলোকে রঙিন করে তোলাটাও গুরুত্বপূর্ন কাজ হতে পারে, যার মাধ্যমে একজন শিল্পী আরেকজনকে কিছু দিতে পারেন।
রবার্তো দরিদ্র মানুষের মলিন ঘরগুলো তার পেইন্টিং ফিগার হিসেবে বেছে নেন। বর্তমানে সব্বোর্চ্চ উচ্চতায় আকাঁর রেকর্ডটি তার দখলে, এই প্রজেক্টটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪০০০ হাজার মিটার উচ্চতায় আকাঁ হয়েছে।
৬. টাইরি গেটন-
১৯৮৬ সালে টাইরি গেটন হেইডেলবার্গে ফিরে এসে দেখেন, তার বেড়ে উঠা ডেট্রয়েট শহরের রাস্তাগুলোর বিধ্বস্ত অবস্থা, চারদিকে মাদকের বিস্তার এবং দারিদ্রতা। দাদার অনুপ্রেরণায় এগুলো বিপক্ষে কিছু করার উদ্দেশ্যে তিনি পেইন্ট ব্রাশকে তার অস্ত্র হিসেবে তুলে নিলেন। এভাবেই হেডেলবার্গ প্রজেক্ট ডিজাইন করা হলো এবং তৈরি হলো যেন তা মানুষের জীবনযাত্রাকে পরিবর্তন করতে পারে।
এই প্রজেক্টে ছিল পেইন্টিং, ভাস্কর্য। পরিত্যক্ত বাড়ী, নষ্ট গাড়ী, টেলিভিশন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এবং রিফ্রিজারেটর কে তিনি ভিন্ন ভিন্ন কম্পোজিশনে বদলে দিলেন, উজ্জ্বল রঙে রাঙিয়ে দিলেন। হেডেলবার্গ টু্রিস্টদের আকর্ষনের কেন্দ্রতে পরিণত হলো সেই সাথে টাইরি গেটন তার কাজের জন্য অনেক আর্ন্তজাতিক পুরস্কার পেলেন।
৭. গোথেনবার্গের “প্রাউড ট্রামস”-
গোথেনবার্গ গর্ভমেন্ট তরুন শিল্পীদের মাধ্যমে তাদের আইকনিক ট্রামগুলোকে নতুন করে রাঙিয়ে তোলার জন্যে একটি প্রজেক্ট শুরু করেন যার নাম “প্রাউড ট্রামস”। পেইন্টাররা রংধনুর রংগুলোকে তাদের নিজস্ব স্টাইলে ব্যবহার করার সুযোগ পেলেন। প্রতিদিন গোথেনবার্গের অধিবাসীরা রংধনুর রঙ কে তাদের শহরে ঘুরে বেড়াতে দেখেন এবং বাড়তি আনন্দ ও অনুপ্রেরণা পান।
সূত্রঃ ব্রাইটসাইড অবলম্বনে
মন্তব্য (0)
ফেসবুক মন্তব্য (0)