বাবার চিত্রকর্ম দেখে ধূমপান ত্যাগ

বাবার চিত্রকর্ম দেখে ধূমপান ত্যাগ

সন্তান ধূমপানে আসক্ত, আর তা নিয়ে খুব মানসিক কষ্টে ছিলেন শিল্পী। একদিন সেই যন্ত্রণার ছবিটাই আঁকলেন। ছবিতে দেখা যায়, একটি গোলাকার ছাইদানি থেকে উপচে পড়ছে সিগারেটের পোড়া ফিল্টার। ছবিটি প্রভাব ফেলেছিল ছেলে ইজায়ার ওপর। বাবার সেই মানসিক অবস্থা অনুভব করতে পেরেছিলেন তিনি। এরপর বাবার প্রতি সম্মান জানিয়ে ধূমপান ছেড়ে দেন। জাপানের সেই ছেলের বাবা শিল্পী তেতসুইয়া নোদা।

 

১৮তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি অব দ্য আর্টসের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও খ্যাতিমান ছাপচিত্রশিল্পী তেতসুইয়া নোদা।

 

শনিবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের লবিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাপানের খ্যাতিমান এই শিল্পী। ভ্রমণ-অবসাদকে সঙ্গী করেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী এই জাপানি শিক্ষক। আলাপচারিতায় নোদা জানান, প্রথমবারের মতো এ প্রদর্শনীতে যোগ দিতে পেরে ভালো বোধ করছেন তিনি। একটি দেশে সরকারিভাবে আয়োজিত এত দীর্ঘ ও ঐতিহ্যবাহী এ প্রদর্শনীতে আগে কখনো আসতে ইচ্ছে করেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নানা কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।’ বাংলাদেশের সমসাময়িক শিল্পকর্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিল্পী কিবরিয়াকে চিনতাম, তাঁর কাজ দেখেছি। তবে এখনকার শিল্পীদের কাজ সম্পর্কে বলব প্রদর্শনীটা ঘুরে দেখার পর।’

 

 

তেতসুইয়া নোদার চিত্রকর্ম ‘ডায়েরি ১৯ মার্চ ১৯৯১’

তেতসুইয়া নোদার চিত্রকর্ম ‘ডায়েরি ১৯ মার্চ ১৯৯১’

 

শিল্পকর্ম দেখে ‘বোঝা’ ও ‘না বোঝা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা শিল্পকর্ম সম্পর্কে ভালো বা খারাপ, এভাবে বলা যায় না। শিল্পকর্ম বোঝার বিষয় নয়, এটা উপলব্ধি করার বিষয়।’

 

শিল্পকর্মের বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে, এই বাজারে প্রবেশের মূলমন্ত্র কী? নোদা বলেন, ‘বাজার বিষয়টা নিয়ে আমার আসলে কিছু বলার নেই। আমি শিল্পকর্মের বাজারের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নই, এমনকি বাজারের কথা ভেবে ছবি আঁকি না। আমার ধারণা, ছবি যদি ভালো হয়, সবাই সেটা সংগ্রহ করতে চাইবে।’

 

নোদার ছাপচিত্রের সিরিজ ‘ডায়েরি অব তেতসুইয়া নোদা’ আঁকার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে বিক্রি হয়ে যায়? তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কো কেন আমার ছবিগুলো নিয়ে গেছে।’ জাপানি সংগ্রাহক স্টিভেন কোর সঙ্গে এক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় নোদার। এরপর থেকে নোদার ছবি সংগ্রহ করতে শুরু করেন তিনি। নোদার শতাধিক ছবি রয়েছে এই সংগ্রাহকের কাছে।

 

 

তেতসুইয়া নোদার চিত্রকর্ম ‘ডায়েরি ১০ মার্চ ১৯৯৪’

তেতসুইয়া নোদার চিত্রকর্ম ‘ডায়েরি ১০ মার্চ ১৯৯৪’

 

অন্য মাধ্যমের বদলে ছাপচিত্রে আগ্রহী হলেন কেন? নোদা বলেন, ‘ছাপচিত্র এমন এক মাধ্যম, যেখানে একটি ছবির অনেকগুলো অনুলিপি তৈরি করা যায়। এতে ছবি তৈরিতে খরচ কম হয়। ছোট ছবিগুলো ১০০ এবং বড়গুলো ৫টি করে অনুলিপি করা যায়।’

 

গত ৫২ বছরে পাঁচ শতাধিক ছবি এঁকেছেন জাপানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ছাপচিত্রী। ‘ডায়েরি’ সিরিজটি কত দিন আঁকতে চান? তিনি বলেন, ‘কোনো শিল্পী কি চায় তার সিরিজ থেমে যাক?’ ‘ডায়েরি ১৯ মার্চ ১৯৯১’ ছবিটির কথা মনে করিয়ে দিলে হাস্যোজ্জ্বল নোদা বলেন, ‘হ্যাঁ, ছবিটা দারুণ স্মৃতিময়।’

 

তেতসুইয়া নোদার চাচা জাপানি-আমেরিকান নাগরিক হিদিও নোদা ছিলেন চিত্রকর ও ম্যুরালশিল্পী। ৩০ বছর বয়সে মারা যান তিনি, তখনো জন্ম হয়নি তেতসুইয়া নোদার। পরিবারে আঁকার রীতি ছিল এবং সব সময়ই চাচার কথা আলোচিত হয়। সে জন্য শিল্পের জগতে আসাটা তেতসুইয়া নোদার জন্য ছিল এক স্বাভাবিক ঘটনা। তবে তাঁর শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে তাঁর গণিতভীতি। বলা যায়, গণিতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেই তাঁর চিত্রকলা নিয়ে পড়া। পড়ালেখা করেছেন টোকিও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ফাইন আর্টস অ্যান্ড মিউজিকের চারুকলা অনুষদের তৈলচিত্র বিভাগে। পরে অবশ্য ছাপচিত্রে মন দেন এই শিল্পী।

 

 

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো