ইসলাম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে এক ফটোগ্রাফারের লড়াই

ইসলাম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে এক ফটোগ্রাফারের লড়াই

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনের বাসিন্দা কার্লোস খলিল গাজম্যান। যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামবিদ্বেষ মোকাবিলায় একটি মিশন হাতে নিয়েছেন এই আমেরিকান মুসলিম ফটোগ্রাফার। দক্ষতার সঙ্গে এই মিশন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

 

 

মুসলিমদের ব্যাপারে বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে তিনি ছবি তোলেন। একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বৈচিত্র্য রয়েছে তা তুলে ধরতে চান।

 

 

 

কার্লোস খলিল গাজম্যান গত দুই বছর ধরে মার্কিন মুলুকে মুসলিমদের নিয়ে তোলা এই ছবির সিরিজের নাম দিয়েছেন ‘মুসলিমস অব আমেরিকা’। এসব ছবি থেকে বাদ যাননি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানরাও।

 

 

 

এই ফটোগ্রাফারের ছবিতে উঠে এসেছে নারী-পুরুষ এবং নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্বিশেষে মুসলিমদের জীবনধারা। যুক্তরাষ্ট্রের ২৬টি প্রদেশ থেকে এমন ৭৩টি ছবি তুলে এনেছেন কার্লোস খলিল গাজম্যান।

 

 

 

মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ১১৪টি সূরার সঙ্গে মিলিয়ে ১১৪টি ছবি তুলতে চান এই আমেরিকান ফটোগ্রাফার। এরইমধ্যে তার এই উদ্যোগ একটি ভ্রমণ প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে।

 

 

 

কার্লোস খলিল গাজম্যান বলেন, ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে মুসলিম ও অমুসলিম উভয় ধরনের মানুষকে শিক্ষা দেওয়াই তার এই উদ্যোগের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

 

ই-মেইলে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কার্লোস খলিল গাজম্যান বলেন, তার এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে, মুসলমান আমেরিকানদের পরিচয় শনাক্তকেন্দ্রিক অস্থিরতা ও আন্তঃসম্পর্কের বিষয়ে কথোপকথন বা আলাপ-আলোচনা তৈরি করা।

 

ছবিগুলোর কোনওটির সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের আয়াত। কোনওটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হাদিসের বানী।

 

তিনি বলেন, এই ফটো সিরিজ মূলত নারীদের প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে। কেননা তারা প্রায়ই ঘৃণা এবং ভুল বোঝাবোঝির শিকার হয়। এ ধরনের ঘটনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

 

২০১২ সালে কলেজে অধ্যয়নকালে ইসলাম গ্রহণ করেন কার্লোস খলিল গাজম্যান। কমার্শিয়াল ফটোগ্রাফির ওপর ডিগ্রি অর্জন করা এই ফটোগ্রাফার বলেন, তিনি তার কাজে মুসলিমদের ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করেছেন। কারণ ইসলাম যেন সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে। কিন্তু বাস্তবে এখানে কিছু রাজনীতিবিদ, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী এবং কিছু মিডিয়া মুসলিমদের বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা অসত্য বক্তব্য তুলে ধরে দাবি করে, মুসলমানরা সহিংসতা এবং গণতন্ত্রের ক্ষয়ক্ষতি সমর্থন করে।

 

এই উদ্যোগের বেশিরভাগই নিজের পকেট থেকে খরচ করেছেন কার্লোস খলিল গাজম্যান। প্রথমদিকে তিনি পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদেরও এই উদ্যোগে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোতে তার এ প্রচেষ্টার খবর প্রকাশিত হয় এবং তা লোকজনের নজর কাড়ে। এই উদ্যোগে অংশ নিতে চান, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এমন মুসলিমদের কাছে তিনি ই-মেইল পেতে শুরু করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ আসতে শুরু করে।

 

 

এমন এক সময়ে এই ফটোগ্রাফি সিরিজটি মানুষকে আকৃষ্ট করছে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধের মাত্রা বাড়ার খবর আসছে। মূল ধারার রাজনীতিতেও মুসলিমবিদ্বেষের অভিযোগ রয়েছে।

 

চলতি বছরের গোড়ার দিকে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর) যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হেট ক্রাইম সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে মার্কিন মুলুকে মুসলিমবিদ্বেষের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার হার বেড়েছে ১৫ শতাংশ।

 

কার্লোস খলিল গাজম্যান জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলিম ও অমুসলিমদের কাছ থেকে তিনি তার ফটোগ্রাফি সিরিজের ব্যাপারে সমানভাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কিছু ঘৃণাত্মক বা বিদ্বেষমূলক ই-মেইল পেয়েছি। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এটি শুধু আমাকে আমার কাজ চালিয়ে যেতে আরও উজ্জীবিত করেছে।

 

 

 

সূত্রঃ বাংলাট্রিবিউন