ক্যামেরা কেনার আগে যা জেনে নিবেন

ক্যামেরা কেনার আগে যা জেনে নিবেন

যারা অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফার তাদের মতে, কমপক্ষে তিন চার বছর সাধারণ ক্যামেরা দিয়েই ছবি তুলে হাত পাকা করতে হয়। ফ্রেমিং বুঝতে হয়। এবং ডিএসএলআর ক্যামেরা এলেই প্রয়োজন কিনা সেটা নিয়েও ভাবতে হয়। আবার অনেকেই বলেন, ছবি ভালো তুলতে পারলেই হল। সেটার জন্য প্রফেশনাল ক্যামেরার কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরও নিজের পকেটের পয়সা খরচ করার আগে কয়েকটি বিষয় নজর দেয়া জরুরি।

 

কেমন ছবি তুলতে চান : ক্যামেরা কেনার আগে নিজেকে আবিষ্কার করুন। ঠিক কোন ধরনের ছবি আপনি তুলতে পছন্দ করেন। কিংবা আপনার হাতে কোন ধরনের ছবি ভালো ওঠে। ফ্রেমিং ঠিক মতো করতে পারছেন কিনা। এমনও হতে পারে, আপনি বিয়ের ছবি ভালো তুলছেন। কিংবা ঘরোয়া কোনো আড্ডার ছবি বা যে কোনো উৎসবের ছবি তুলে ফেলার জন্য আপনার হাত পাকা। তখন মনে রাখবেন, ক্যামেরা কেনার পাশাপাশি হাতে একটা ভিডিও ক্যামেরাও রাখলে ভালো। কারণ, যে কোনো ইভেন্ট মানেই হল সময়কে ধরে রাখা। যখন আপনি ভিডিও করবেন তখন পরে ছবি নিয়ে খেলা করতে বেশি আনন্দ পাবেন। কারণ, এডিটে বসে ছবির প্রতিটি মুহূর্তকে অনুভব করা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। তবে আলাদা করে ভিডিও ক্যামেরা না কিনলেও চলবে। ডিএসএলআর ক্যামেরাতে এমনিতেই ভিডিও অপশন থাকে। যদিও বেশি ভিডিও করলে ক্যামেরার সেন্সরের ওপর চাপ পড়ে।

 

ক্যামেরা কেনার সময় মনে রাখবেন আপনার ভালো একটা ক্যামেরার ব্যাগ কিনে নেয়াটা খুবই জরুরি। অবশ্যই সূর্যের আলো কিংবা বৃষ্টির পানি যেন ভেতরে ঢুকে আপনার লেন্সের ক্ষতি না করতে পারে এমন ব্যাগ। অনেকেই সাংবাদিকতা করার জন্য ক্যামেরা কিনেন। মনে রাখবেন, যদি ফটোজার্নালিস্ট হতে চান তবে আপনাকে মেধাবী হতে হবে। মুহূর্তেই ফ্রেমিং বুঝে ছবি তুলে আনতে হবে। হয়তো আপনার হাতে সময় আছে ১ মিনিট এ সময়ের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত ছবিটি তুলে আনতে হবে। এজন্য প্রচুর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাই ফটোজার্নালিস্ট হতে চাইলে শুরুতেই দামি ক্যামেরা না নিয়ে সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে চর্চা শুরু করে দিন।

 

শখে বা অর্থ আয় : অনেকেই মনে করেন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হতে চাইলেই বুঝি ডিএসএলআর প্রয়োজন। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, প্রফেশনালদের অনেক সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। অনেক প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার আছেন যারা ৩৫ মিমি. ফিল্ম ক্যামেরা দিয়েও ছবি তুলে অভ্যস্ত।আপনি যদি নতুন ফটোগ্রাফার হয়ে থাকেন তবে আগেভাগেই উত্তেজিত হয়ে দামি ক্যামেরা কেনা থেকে বিরত থাকাই ভালো। অন্তত একবছর চর্চা করা দরকার সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে। পয়েন্ট, শুট, টাইম, ফ্রেমিং, লেন্স কনসেপ্ট, শাটারের কাজ, আইএসও এ বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা নিন। চর্চার এক পর্যায়ে ভালো ক্যামেরার দিকে তাকানোই শ্রেয়।

 

দাম : যখন সিদ্ধান্ত নিবেন ডিএসএলআর কিনবেন তখন বাজার ঘুরে দেখুন। একইসঙ্গে কি ধরনের ছবি তুলবেন সেটার জন্য কেমন লেন্স দরকার সেটা খোঁজ নিন। প্রয়োজনে পরামর্শও নিতে পারেন। তারপর একটা বাজেট প্ল্যাট করুন। শুরুতেই বলেছি, বাজেটে অবশ্যই ব্যাগ ও লেন্স, সেন্সর ক্লিনিং কিট রাখবেন। যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ, বাজারে গেলে এবং ওয়েবসাইটগুলোতে নিত্যনতুন লেন্স কিনে কনফিউশনে পড়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা রেখে আপাতত যা দরকার সেটার দিকে নজর দিন। শুরুতে, ওয়াইড লেন্স, প্রাইম লেন্স কেনা সুবিধাজনক। তারপর ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী কি লেন্স কিনতে হবে সেটা আপনিই বুঝে ফেলবেন।

 

ক্যামেরার যত্ন নিন : মনে রাখবেন, ডিএসএলআর মোটেও কোনো খেলনা না। যত্ন করতে হবে মন থেকে। সবসময় ক্যামেরার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিন খেয়াল করবেন ক্যামেরার সবকিছু ঠিক আছে কিনা। লেন্সগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে, সেন্সরে কোনোভাবেই ধুলোবালি ঢুকতে দেয়া যাবে না। মোট কথা ধুলোবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে।

 

 

 

লেখকঃ সাইফুল ইসলাম

সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর

ছবিঃ সংগৃহীত