আপনি কোন ধরনের ফটোগ্রাফার?

আপনি কোন ধরনের ফটোগ্রাফার?

মানুষ নিশ্চয়ই এমন ডাক্তারের উপর নির্ভর করে না, যিনি একই সাথে দাতেঁর, চোখের, মস্তিস্কের, হার্টের, হাড়ের, মনের চিকিৎসাসহ সকল অসুখের চিকিৎসা করেন। শরীরের পৃথক পৃথক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্যার জন্য আমরা বিশেষায়িত ডাক্তারের কাছে যাই, কারন তিনি ঐ বিষয়টি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ। সকল ডাক্তারই ডাক্তার, কিন্তু সবাই সব বিষয়ে দক্ষ নন। একজন ফটোগ্রাফারের ক্ষেত্রেও তাই। একজন ফটোগ্রাফারের কাজ, পছন্দ, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাকে অভিজ্ঞ করে তোলে। নিচে বিষয় অনুযায়ী বিশেষায়িত ফটোগ্রাফার সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যেতে পারেঃ

 

এ্যামেচার ফটোগ্রাফার

এ্যামেচার ফটোগ্রাফার সব ধরনের ছবি তোলেন। যা ভালো লাগে তাই তোলেন এবং নির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন। তিনি শখের জন্য ছবি তোলেন, আয় করার জন্য নয়। এ্যামেচার ফটোগ্রাফার এক অর্থে শিক্ষানবীশ ফটোগ্রাফার, যার কাছে দক্ষতার চেয়ে ছবির জন্য ভালোবাসাটাই মূখ্য।

 

ফ্যাশন ফটোগ্রাফার

ফ্যাশন ফটোগ্রাফার গার্মেন্টস, পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কিত বিষয়ে ক্লায়েন্টের চাহিদানুযায়ী প্রফেশনাল ছবি তোলেন এবং ভোক্তার কাছে তা হাইলাইট করে আগ্রহী করে তোলেন। মডেল, লাইট, মেকআপ, ব্রান্ড, সিজন, চলতি ষ্টাইল, পাবলিকেশন ইত্যাদি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং ধারনা থাকতে হয়। ফ্যাশন ফটোগ্রাফি নির্ভরযোগ্য একটি পেশা এবং জীবন ধারনের জন্য ভালো আয়ের উৎস হতে পারে।

 

ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার

ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার নিজ পয়েন্ট অব ভিউ থেকে প্রাকৃতিক কোনো দৃশ্য এবং এর সৌন্দর্যকে ক্যামেরাবন্দী করেন। এটি একটি নির্দিষ্ট স্থানের ও সময়ের দৃশ্যমান বিস্তারিত গল্প। কেউ কেউ একমাত্র প্রকৃতি কর্তৃক সৃষ্ট উপাদানকেই (আকাশ-মাটি, গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বত, মরুভূমি-জঙ্গল, নদী-নালা, সাগর ভূমি এবং জলবায়ুর বৈচিত্র্য ইত্যাদি) ল্যান্ডস্কেপ ছবিতে দেখাতে চায়। তারা শহর-গ্রাম, মানুষ সৃষ্ট উপাদান ইত্যাদিকে ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির উপাদান হিসেবে স্বীকার করেনা। আবার অনেক ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার আছেন যারা এই নিয়ম মেনে চলে না।

 

ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার

বন্য পশু-পাখি, জীব-জন্তু এবং তাদের খাদ্যাভাস, জীবন-যাপন পদ্ধতি ও আচরনকে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার তার ছবির বিষয় হিসেবে বেছে নেন। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি একটি ধৈর্য্য পরীক্ষা, কারন বন্য জীব-জন্তু ল্যান্ডস্কেপ অথবা মডেলদের মতো ছবি তোলার জন্য সুযোগ করে দেয়না, ফটোগ্রাফারকে সুযোগ তৈরী করে নিতে হয়।

 

পোট্রেট ফটোগ্রাফার

এই ফটোগ্রাফির মূল বিষয় হচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে তার মুখ। পোট্রেট ছবিতে এক বা একাধিক মানুষ থাকতে পারে। এটি ফটোগ্রাফির সবচেয়ে সাধারন এবং পুরোনো একটি বিষয়। মুখের ভঙ্গি, অভিব্যক্তি এবং ব্যক্তির চরিত্র ছবিতে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারার উপর একজন পোট্রেট ফটোগ্রাফারের দক্ষতা নির্ভর করে।

 

এরিয়াল ফটোগ্রাফার

উচুঁ কোনো স্থান বা অবস্থান থেকে বিমান, হেলিকপ্টার, রকেট, স্কাইড্রাইভার, বেলুন, ঘুড়ি অথবা সময়ের ট্রেন্ড ড্রোন দিয়ে এরিয়াল ফটোগ্রাফার ভূ-পৃষ্ঠের ছবি তোলেন। ফটোগ্রাফার নিজে অথবা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে; যে কোনো ভাবেই এরিয়াল ফটোগ্রাফি করতে পারেন। প্রথম এরিয়াল ফটোগ্রাফ তোলা হয় ১৮৫৮ সালে একটি বেলুনের সাহায্যে।

 

স্পোর্টস ফটোগ্রাফার

খেলা সম্পর্কিত বিষয়ে ইনডোর-আউটডোরে ব্যক্তিগত, বানিজ্যিক এবং বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনে স্পোর্টস ফটোগ্রাফার দরকার হয়। স্পোর্টস ফটোগ্রাফারকে দ্রুত এবং টাইমিং অনুযায়ী ছবি তুলতে হয়, তাই তার ক্যামেরা এবং অবস্থান সম্পর্কে বেশ ভালো ধারনা থাকতে হয়।  

 

ইভেন্ট ফটোগ্রাফার

ইভেন্ট ফটোগ্রাফার ছোট-বড় কর্পোরেট মিটিং, ট্রেড শো, পার্টি, সম্মেলন, প্রমোশনাল, প্রতিযোগিতা, কনসার্ট, পারিবারিক ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ‍বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছবি তুলে দেন। অনেক মানুষের ভীড়ে অনুষ্ঠানের ধরন এবং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ইভেন্ট ফটোগ্রাফারকে তুলতে হয়।

 

এস্ট্রোফটোগ্রাফার

পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে শক্তিশালী টেলিস্কোপ (যেমন-হাবল টেলিস্কোপ) দিয়ে গ্রহ-উপগ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, নিহারিকা অথবা যে কোনো উদ্দেশ্যে ছবি তোলাকে এস্ট্রোফটোগ্রাফি বলে। এই ধরনের ছবি তোলার ক্ষেত্রে ফটোগ্রাফারের দক্ষতার চেয়ে টেলিস্কোপের শক্তি এবং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার সিস্টেম আসল ভূমিকা পালন করে।

 

ফটোজার্নালিষ্ট

ফটোজার্নালিষ্ট খবরের জন্য ছবি তুলে আনেন, যা কোনো খবরের দৃশ্যমান গল্প এবং প্রমান হিসেবে কাজ করে। ঘটনা, খবর এবং সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তাকে দৌড়াতে হয়।


ম্যাক্রো ফটোগ্রাফার

ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে ছোটো জড়বস্তুর, প্রানী অথবা কিট-পতঙ্গের ছবি খুব কাছ থেকে ডিটেইলসসহ তোলা হয় যা সাধারনত খালি চোখে দেখা যায় না।

 

মাইক্রো ফটোগ্রাফার

মাইক্রোস্কোপের (অনুবিক্ষন যন্ত্র) লেন্স দিয়ে বালু দানার চেয়েও ছোটো জিনিসের ছবি ‍যিনি তোলেন, তিনিই মাইক্রো ফটোগ্রাফার। মাইক্রো ফটোগ্রাফিতে এস্ট্রোফটোগ্রাফির মতো টেলিস্কোপ ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করতে হয়।

 

মেডিক্যাল ফটোগ্রাফার

মেডিক্যাল ফটোগ্রাফার মেডিকেল এবং সার্জিকাল-অটোপসি-রেডিওগ্রাফি সম্পর্কিত সকল বিষয়, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, ডকুমেন্টেশন, গবেষনা, পেশেন্টের অবস্থা এবং যে কোনো রেকর্ডের জন্য ছবি তুলেন। একজন মেডিক্যাল ফটোগ্রাফারের  চিকিৎসা এবং এ সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকতে হয়।

 

স্যাটেলাইট ফটোগ্রাফার

স্যাটেলাইট ফটোগ্রাফিতে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০০০ কিলোমিটার উপর থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের ছবি তোলা হয়। আবহাওয়া ও জলবায়ু, ভূ-তত্ব, সমুদ্র বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, মিলিটারীসহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ছবি তোলা হয়। ১৯৬০ সালে একটি ওয়েদার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রথম স্যাটেলাইট ফটোগ্রাফটি তোলা হয়েছিলো।

 

রিয়েল এস্টেট ফটোগ্রাফার

রিয়েল এস্টেট ফটোগ্রাফার ঘর-বাড়ি, এপার্টমেন্ট, অফিস স্পেস, ব্যবসায়িক সম্পত্তি, ভেন্যু ইত্যাদি ভাড়া অথবা বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা অথবা ভাড়া গ্রহীতাকে সম্পত্তি/স্পেস/লোকেশন সম্পর্কে দৃশ্যমান ধারনা প্রদানের জন্য ছবি তোলেন। রিয়েল এস্টেট ফটোগ্রাফার ছবির মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতাকে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং তাকে কল্পনা করতে সাহায্য করেন।

 

সায়েন্টিফিক ফটোগ্রাফার

সায়েন্টিফিক ফটোগ্রাফার বিভিন্ন ধরনের ফটো ইমেজিং টেকনিক যেমন-ইনফ্রারেড, আল্ট্রাভায়োলেট, থার্মাল, টাইম ল্যাপস, মাইক্রোগ্রাফি ব্যবহার করে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষনার তথ্য-উপাত্ত রেকর্ড করেন। এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ইমেজের তথ্য বিশ্লেষন করে রিপোর্ট, আর্টিকেল, গবেষনাপত্র তৈরী করা হয়। 

 

ফুড ফটোগ্রাফার

গ্রাহকের ইনডোর-আউটডোর বিজ্ঞাপন, মেন্যু অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে একজন ফুড ফটোগ্রাফার খাবারের ছবি তুলেন। কিভাবে খাবার এবং এর পরিবেশনের ছবি তুললে তা ভোজনরসিকদের কাছে মুখরোচক এবং আকর্ষনীয় হবে তা তাকে জানতে হয়।

 

ট্রাভেল ফটোগ্রাফার

পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং ভ্রমন পিপাসু মানুষদের কাছে নতুন কোনো আকর্ষনীয় এবং জনপ্রিয় স্থান পরিচয় করিয়ে দিতে ট্রাভেল ফটোগ্রাফার ছবি তোলেন। এইসব ছবি পর্যটকদের ঐ স্থানে ভ্রমনে আগ্রহী করে তোলো। তিনি কোনো ভৌগলিক স্থানের ছবির সাথে সাথে সেখানকার মানুষের জীবন-যাপন পদ্ধতি, সংস্কৃতি, ফ্যাশন, আবাসন, খাবার, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক একটি ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেন।

 

স্ট্রীট ফটোগ্রাফার

স্ট্রীট ফটোগ্রাফি বলতে শুধুমাত্র কোনো রাস্তার ছবি বুঝালেও সামগ্রিক অর্থে, এটি কোনো স্থানের প্রাত্যাহিক জীবন-যাপনের ছবি। স্ট্রীট ফটোগ্রাফার একটি সমাজের মিরর ইমেজকে তুলে ধরেন। স্ট্রীট ফটোগ্রাফার জনহীন-জনবহুল রাস্তা এবং এতে অবস্থানরত মানুষের সাথে সাথে পার্কিং লট, পার্ক, শপিং মল, সৈকত, বাস-ট্রেন-জাহাজ স্টেশন ইত্যাদিরও ছবি তুলেন।

 

আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফার

আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফার স্কুবা ডাইভিং, সাবমার্সিবল অথবা রিমোট কন্ট্রোল চালিত যন্ত্রপাতির সাহায্যে পানির নিচে অথবা সাগরতলের জীব-বৈচিত্র, পরিবেশ, গঠন, ভূতত্ব ইত্যাদি বিষয়ে ছবি তোলেন। বৈজ্ঞানিক গবেষনা, বাণিজ্যিক, ব্যক্তিগত এবং আরো বিভিন্ন প্রয়োজনে আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফারের ডাক পড়ে। আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফারের অন্যতম দক্ষতা হচ্ছে পানির নিচের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারা।

 

মডেল ফটোগ্রাফার

বিপণন, বিজ্ঞাপন, প্রমোশনাল, গ্ল্যামার ও ফ্যাশন ম্যাগাজিনসহ এ সম্পর্কিত বিষয়ে অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফারই সামগ্রিক অর্থে মডেল ফটোগ্রাফার। মডেল ফটোগ্রাফারদের মাঝেও দক্ষতা, বিষয় এবং সেক্টর অনুযায়ী পার্থক্য রয়েছে। 

 

ওয়েডিং ফটোগ্রাফার

ওয়েডিং ফটোগ্রাফার বিয়ে এবং এ সম্পর্কিত অনুষ্ঠানের বিশেষ মূহুর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দী করেন। গ্রাহকের ধরন, চাহিদা, বাজেট, পরিবেশ-পরিস্থিতি, লোকেশন, অনুষ্ঠানের ধরন বুঝে ওয়েডিং ফটোগ্রাফার ছবি তুলেন।

 

স্টক ফটোগ্রাফার

স্টক ফটোগ্রাফার অথবা স্টক ফটোগ্রাফী ড্রিস্টিবিউটর বিভিন্ন ধরনের ছবি তুলে রয়্যালিটি ফ্রি ছবি হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় করেন। প্রয়োজনে যে কেউ তার ছবি কিনে ব্যক্তিগত অথবা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে পারেন। ফটোগ্রাফার ছবির স্বত্বাধিকারী থাকেন এবং কপিরাইট লাইসেন্সে শর্ত যুক্ত করে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করেন।
 

পাপারাজ্জি

পাপারাজ্জি স্বাধীন ফটোগ্রাফার হিসেবে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে কাজ করেন। তারা মানুষের আগ্রহ এবং মিডিয়ার চাহিদানুযায়ী সুযোগমতো জনপ্রিয় মানুষদের ব্যক্তিগত বিষয়সমূহ অনুমতি না নিয়ে ক্যামেরাবন্দি করে বিক্রয় করেন। এরা মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়সমূহকে মানুষের কাছে স্ক্যান্ডাল আকারে প্রকাশ করেন যা ভুক্তভোগী মানুষের সামাজিক সম্মান প্রশ্নবিদ্ধ করে। সেই অর্থে পাপারাজ্জি হচ্ছে Man behind the lense, who have lack of commonsense.