স্ট্রিট ফটোগ্রাফির ১০টি টিপস

স্ট্রিট ফটোগ্রাফির  ১০টি টিপস

‘স্ট্রিট ফটোগ্রাফি’র সঙ্গে পরিচিত নন এমন আলোকচিত্রী পাওয়া দায়। তারপরেও যদি স্ট্রিট ফটোগ্রাফি সম্পর্কে না জানা থাকে, তাহলে আলোকচিত্র বিষয়ক  ওয়েব সাইট পেটাপিক্সেলের প্রতিবেদনের আলোকে চলুন জেনে নেওয়া যাক, বিষয়টি আসলে কী?

 

স্ট্রিট ফটোগ্রাফি:

পোরট্রেইট কিংবা ল্যান্ডস্কেপের মতো স্ট্রিট ফটোগ্রাফিও আলোকচিত্রের একটি শাখা, যার মাধ্যমে আলোকচিত্রী দৈনন্দিন জীবনের চলমান ঘটনাকে ক্যামেরাবন্দী করেন। এ ধরনের আলোকচিত্রের জন্য দরকার নেই কোনো বাড়তি অনুমতি, অর্থ কিংবা ব্যাপক প্রস্তুতির। এজন্য শুধু প্রয়োজন ছবি তোলার ইচ্ছা, ক্যামেরা এবং রাস্তা।

 

নিজ বাসার সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে যেকেনো রাস্তা কিংবা গলি হতে পারে স্ট্রিট ফটোগ্রাফির আদর্শ স্থান। যদিও অনুমতির প্রয়োজন নেই এবং আলোকচিত্রী শুধু দৈনন্দিন জীবনের চলমান ঘটনাকেই ক্যামেরাবন্দী করবেন, তবুও ‘আকর্ষণীয় সাবজেক্ট’-এর ক্ষেত্রে আলোকচিত্রী চাইলে গতানুগতিক ধারা মেনে অনুমতি নিয়ে কারো পোরট্রেইট তুলতে পারেন বলে জানিয়েছে পেটা পিক্সেল। মোদ্দা কথা, স্ট্রিট ফটোগ্রাফির তেমন কোনো বাঁধাধরা নিয়মকানুন নেই।

 

স্ট্রিট ফটোগ্রাফি বিষয়ে ১০টি টিপসও জানিয়েছে আলোকচিত্র বিষয়ক সাইটটি। চলুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক, সে ১০ টিপস-

 

১. লেন্স

প্রথমে আসা যাক লেন্স বিষয়ে। হয়তো স্ট্রিট ফটোগ্রাফির জন্য আপনি টেলিফোটো লেন্স ব্যবহার করতে চাইবেন। চাওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে, এর ফলে দূর থেকে ছবি ধারণ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এ কাজটি করলে যতটা না সফল হবেন, তার চেয়ে বেশি হতাশ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ?

 

একবার চিন্তা করুন, আপনি ব্যস্ততম একটি রাস্তায় আকারে বড়, ওজনে ভারী এক লেন্স লাগানো ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে মানুষ আপনাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে তারা নিজেরাই নিজের অজান্তে চলাফেরায় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। কারণ এমন দৃশ্য দেখে তারা অভ্যস্থ নন। স্ট্রিট ফটোগ্রাফির অন্যতম একটি অলিখিত নিয়মই হচ্ছে মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া বা তাকে ক্যামেরার উপস্থিতি বুঝতে না দেওয়া। বুঝাই যাচ্ছে, টেলিফোটো লেন্স নিয়ে এরকম হবার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এজন্য স্ট্রিট ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে ‘ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল’ লেন্স ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে পেটাপিক্সেল। এতে করে একদিকে যেমন আপনার ক্যামেরার ওজন কমে আসবে, অন্যদিকে মানুষও আপনাকে শুরুতে এক নজর দেখে নিলেও, পরে আর ততোটা গুরুত্বসহকারে মাথা ঘামাতে যাবে না। এতে করে অনেকটা সহজেই মানুষের ভীড়ে মিশে যেতে পারবেন এবং তুলে আনতে পারবেন বৈচিত্র্যময় নানা ছবি।

 

২. ক্যামেরা সেটিংস

আলোকচিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘ক্যামেরা সেটিংস’। এটি ঠিক না থাকলে, যতো গ্যাজেটই ব্যবহার করা হোক না কেন, কাঙ্খিত ছবি পাওয়া সম্ভব নয়। স্ট্রিট ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে ক্যামেরা সেটিংস AV বা অ্যাপাচার প্রায়োরিটিতে রাখার পরামর্শ দিয়েছে পেটাপিক্সেল। এতে করে ডেপথ অফ ফিল্ড কম পেলেও শাটার স্পিডের কারণে আপনার তোলা ছবি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে। কারণ এই মোড স্বয়ংক্রিয়ভাবে শাটারস্পিড ঠিক করে নেয়। আর স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে অধিকাংশ সময়েই আপনাকে সাবজেক্ট এর পেছনে ছুটতে হবে, সে সময়টিতে এই সেটিংস আলোকচিত্রীকে বাড়তি সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করে বলেই জানিয়েছে পেটাপিক্সেল। তবে প্রয়োজনে ক্যামেরার সেটিংস আপনি পরিবর্তন করতেই পারেন, এতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

 

৩. সাবজেক্ট এর কাছে

সাবজেক্ট এর কাছে থেকে ছবি তুলুন। এজন্য যতটা সম্ভব ততটা কাছে যান। প্রথম পরামর্শেই বলা হয়েছে স্ট্রিট ফটোগ্রাফির জন্য ‘ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল’ লেন্স ব্যবহার করতে। এখন আপনি বুঝতে পারবেন, ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স ঠিক কী কাজে আপনাকে সাহায্য করবে। এই লেন্সের সহায়তায় আপনি খুব সহজেই আপনার সাবজেক্টের নিকটে পৌঁছাতে এবং কাঙ্খিত ছবিটি তুলে নিয়ে আসতে পারবেন। দূর থেকে ছবি তোলার বদলে এই লেন্সের বদৌলতে সহজেই মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে ডিটেইলসমৃদ্ধ ছবি ধারণ করা সম্ভব।

 

৪. ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতে থাকুন

স্ট্রিট ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে আপনি যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি দেখবেন, তা হল আপনার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে না। সবাই সবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং আপনি সিদ্ধান্ত নিতে যতটা সময় নিচ্ছেন, ততক্ষণে সাবজেক্ট তার স্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে এবং আপনার ‘সাজানো ফ্রেম’ নষ্ট হয়ে গেছে। স্ট্রিট ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সুযোগ বলে কিছু নেই। এজন্য যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, তা হল, প্রতিটি মুহূর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বা আকর্ষণীয় অনেক বিষয়বস্তু। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় হল, যতক্ষণ ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত, ততক্ষণ পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া এবং ক্যামেরা সেটিংস ঠিক রেখে ক্যামেরা নিয়ে রাস্তার এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরতে থাকা। আর ছবি তোলার সময় দ্রুত তোলা। তবে দ্রুত তুললেও তাড়াহুড়ো করার বিষয়টি বাদ দিতে হবে। এটি স্ট্রিট ফটোগ্রাফির একটি কৌশল যা আপনাকে অনুশীলনের মাধ্যমে রপ্ত করতে হবে, একদিনেই হবে এমনটা আশা না করাই শ্রেয়, তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

 

৫. ভয়কে দূর করুন

স্ট্রিট ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ভয় কাজ করে;  অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা হচ্ছে, বিষয়টি কারো পছন্দ নাও হতে পারে, অপমানের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ভয় কাজ করলে, আর যাই করা যাক স্ট্রিট ফটোগ্রাফি করা সম্ভব নয়। আর তাই মাথা থেকে এ ভয় ঝেড়ে ফেলুন। মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে ছবি তোলার কাজটি করতে পারেন, বেছে নিতে পারেন পরিচিত রাস্তা বা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল এমন কোনো সড়ক। আর যদি একান্তই আপনার ভয় সত্যি হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন, যদিও সে আশঙ্কা নেই বললেই চলে। কিন্তু এরকম পরিস্থতিতে পড়ার আগেই ঘাবড়ে গিয়ে গোটা ছবি তোলার আয়োজন নষ্ট না করার চেষ্টাই হবে ভাল।

 

৬. ছবি তুলুন কোমরের কাছে ক্যামেরা রেখে

স্ট্রিট ফটোগ্রাফির সাধারণ বা গতানুগতিক নিয়ম বলে, ক্যামেরায় চোখ রেখে যদি ছবি তোলা সম্ভব হয়, তাহলে ফলাফল ভালো পাওয়া যায়। কথা সত্য, কিন্তু স্ট্রিট ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে এমন অনেক সময় আসবে, যখন এই নিয়ম মেনে চলাটা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়টির জন্যও চলুন কল্পনার আশ্রয় নেওয়া যাক-

 

“আপনি অপিরচিত রাস্তার একটি স্থানে দাঁড়িয়ে চোখ বরাবর ক্যামেরা রেখে তাক করে রয়েছেন এবং অচেনা মানুষের দিকে ক্যামেরা ঘুরাচ্ছেন আর ছবি তুলছেন”

 

উপরোক্ত উদাহরণটি আপনার জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও হতে পারে, কিন্তু যাদের ছবি তুলছেন তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। আর তাদের সেই অস্বস্তি আপনার তোলা ছবিতে ধরা পড়বে। এই সমস্যা এড়াতে আপনি যে কাজটি করতে পারেন, তা হল- আপনার কোমর বরাবর ক্যামেরাটি রাখুন এবং সেখান থেকেই ছবি তুলুন। মানুষ টের পাবেন না যে তাদের ছবি তোলা হচ্ছে। বিষয়টি অদ্ভুত শোনালে এতে ফলাফল ভালো পাবেন।  আর যেসব ক্ষেত্রে আপনার ছবি তোলার ইচ্ছা রয়েছে কিন্তু কোনো কারণে ক্যামেরা তাক করলেই ছবিটি তুলতে পারবেন না বলে মনে করছেন, সেখানে নির্দ্বিধায় এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারেন। অভিজ্ঞ ফটোসাংবাদিক ‘এড কাশি’ অনেক প্রতিকূল স্থানে, এভাবে ছবি তুলেছেন। কম্পোজিশনের ব্যাপারে ভাবছেন? কোমর বরাবর ক্যামেরা রেখে ভালো ছবি তোলার জন্য অনুশীলন প্রয়োজন। রাস্তা থেকেই না হয় শুরু হোক আপনার এই অনুশীলন।

 

৭. ছবি তুলুন রাতে

স্ট্রিট ফটোগ্রাফির ভিন্ন স্বাদ পেতে রাতে ছবি তুলুন। দিনের মতো সহজে ছবি তুলতে না পারলেও রাতের আলো আঁধারি আপনাকে অনেক সুন্দর মূহূর্ত এনে দেবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ক্যামেরা সেটিংস-এর ব্যাপারে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সঙ্গে একটি ট্রাইপড থাকলে ভালো হয় এমনটাই পরামর্শে জানিয়েছে পেটাপিক্সেল। এ ছাড়াও আলোকচিত্রী চাইলে স্বল্প আলোর ছবি এবং ‘স্টিল ফ্রিজ’ অ্যাকশনধর্মী ছবি তোলার জন্য ‘ফাস্ট অ্যাপাচার লেন্স’ ব্যবহার করতে পারেন।

 

৮. গতানুগতিক ধারার বাইরে ছবি তোলার চেষ্টা করুন

আপনি যা তুলছেন সে ছবিতে মানুষ থাকতে হবে স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে এসব বিষয় জরুরি না। যেটা জরুরি সেটি হল, আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রকাশ করা। সেটি আপনি খুব সাধারণভাবে করতে পারেন, আবার শৈল্পিকভাবেও করতে পারেন। অসংখ্য মানুষের ভীড়ে কীভাবে ছবি তুলবেন সেটির বদলে কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ছবি তুলবেন তা বিবেচনা করুন একবার, প্রয়োজনে অল্প কিছুক্ষণ সময় নিন, তারপর নেমে পড়ুন ছবি তুলতে।

 

৯. ছবির গুণগত মানই সব নয়

অনেকেই হয়তো এ বিষয়টির সঙ্গে একমত হবেন না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছবির মানের দিকে লক্ষ্য রাখতে গিয়ে হয় মুহূর্তটিই হারিয়ে যায়, না হয় ছবি থেকে হারিয়ে যায় ডিটেইল। স্ট্রিট ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে রাস্তার সাধারণ কাজই ক্যামেরাবন্দী হয়। ওই সাধারণ কাজেরও কিছু অসাধারণ মুহূর্ত থাকে, যা ক্ষণিকের জ্বলে উঠেই আবার হারিয়ে যায়। মান ঠিক রাখতে গিয়ে এই মুহূর্তগুলো হারানোর কোনো মানে হয় না। বিশ্বের অসংখ্য বিখ্যাত আলোকচিত্রী এমন অনেক ছবি তুলেছেন, যে ছবিগুলোর গুণগত মান ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি কিন্তু তাতে মুহূর্তগুলো ধরা দিয়েছে। স্ট্রিট ফটোগ্রাফির সময় এ বিষয়টি সম্পর্কেও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছে পেটাপিক্সেল।

 

১০. আনন্দের সঙ্গে করুন

ছবি তোলার সময় যদি জোর করে ছবি তোলার চেষ্টা করেন, তাহলে যে ফলাফলটি আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তা হল আপনি ছবি অসংখ্য ছবি পাবেন কিন্তু সেগুলোর কোনো অর্থ থাকবে না। স্ট্রিট ফটোগ্রাফি যদি আনন্দ নিয়ে করতে পারেন, তা হলেই শুধু রাস্তায় নামুন। আনন্দ না পেলে শুধু শুধু ছবি তুলে সময় নষ্ট করতে যাবেন না। যে সময়টি ছবি তুলবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন, সে সময়টি বরং ব্যয় করুন কেন স্ট্রিট ফটোগ্রাফি আপনার ভালো লাগছে না, জিনিসটিকে ভিন্ন কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা সম্ভব বা কীভাবে স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে আনন্দ নিয়ে আসা যায় সে বিষয়গুলো চিন্তা করে। তারপরেও যদি ভালো না লাগে, যে ধরনের ছবি তুলতে আপনার ভালো লাগে, সে ধরনের ছবি তোলার জন্য বেরিয়ে পড়ুন।

 

 

সূত্রঃ ক্লিক ডট বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম

লেখক-আজরাফ আল মূতী

ছবি- সংগৃহীত