উইকি লাভস আর্থ ২০১৮ জিতে আপনিও যেতে পারেন সুইডেন

উইকি লাভস আর্থ ২০১৮ জিতে আপনিও যেতে পারেন সুইডেন

শুরু হয়েছে বিভিন্ন দেশের সংরক্ষিত অঞ্চলগুলোর ছবি তোলার প্রতিযোগিতা ‘উইকি লাভস আর্থ ২০১৮’। উইকিপিডিয়া আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। জানাচ্ছেন আলম চৌধুরী-

 

উইকি লাভস আর্থ

‘উইকি লাভস আর্থ’, যা সংক্ষেপে ‘ডাব্লিউএলই’ নামে পরিচিত একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক ছবি তোলার প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর মে মাসজুড়ে বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ অঞ্চলের সংরক্ষিত এলাকার ছবি তুলে উন্মুক্ত ছবির ভাণ্ডার উইকিমিডিয়া কমন্সে (http://commons.wikimedia.org)  আপলোড করে থাকেন। বিভিন্ন দেশের সংরক্ষিত অঞ্চলগুলোর ছবির একটি স্থায়ী সংগ্রহশালা তৈরি করার পাশাপাশি ছবিগুলো যাতে উইকিপিডিয়ায় সংশ্লিষ্ট নিবন্ধেও ব্যবহার করা যায়, সেটিও এ প্রতিযোগিতার অন্যতম একটি লক্ষ্য। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করাও একটি বড় লক্ষ্য। ২০১৩ সালে প্রথম ইউক্রেনে পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে শুরু হয় ‘উইকি লাভস আর্থ’ প্রতিযোগিতা। এর নেতৃত্ব দেন ইয়েভেন বুকেট নামের একজন। পরের বছর থেকেই এ প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিকভাবে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৪ সালে ইউরোপের বাইরে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং ১৬টি দেশ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ২০১৫ সালে ২৬টি দেশের আট হাজার ৪০০ প্রতিযোগী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং এক লাখের বেশি ছবি জমা পড়ে। ২০১৬ সালের উইকি লাভস আর্থ পর্বে ২৬টি দেশের সাত হাজার প্রতিযোগী অংশ নেন এবং জমা পড়ে প্রায় ৭৫ হাজার সংরক্ষিত এলাকার ছবি। চলতি বছর প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ২৭টি। মে মাসজুড়ে প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর স্থানীয় ফলাফল ঘোষণা করা হয় জুলাই মাসে। পরবর্তী সময় চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয় সেপ্টেম্বর মাসে। আন্তর্জাতিক এ প্রতিযোগিতার বিস্তারিত আরো জানা যাবে www.wikilovesearth.org ঠিকানায়।

 

কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান পার্ক। আলোকচিত্রী: সুঞ্জিত কর্মকার, সিসি-বাই-এসএ৪.০   

 

উইকি লাভস আর্থে বাংলাদেশ বার্ষিক

এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো অংশগ্রহণ করছে। বাংলাদেশে এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে ‘উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ’। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের যে কেউ অংশ নিতে পারবেন। প্রতিযোগিতা-সংশ্লিষ্ট পাতায় বাংলাদেশের সংরক্ষিত অঞ্চলের তালিকা দেওয়া আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবেই সে দেশ বা অঞ্চলের সংরক্ষিত এলাকার তালিকা করা হয়। বাংলাদেশেও বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের তৈরি করা তালিকা অনুসারে সংরক্ষিত এলাকার তালিকা করা আছে। বন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, মোট ১৭টি জাতীয় উদ্যান, ২১টি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ও ১৮ অন্যান্য সংরক্ষিত অঞ্চল রয়েছে। আর এ অঞ্চলগুলোর ছবি নিয়েই অংশ নেওয়া যাবে এই প্রতিযোগিতায়। তবে শুধু যে এ মাসেই ছবি তুলতে হবে বিষয়টি তা নয়। প্রতিযোগিতার আওতায় বছরের যেকোনো সময়ে তোলা, যেকোনো স্থানের ছবি যত খুশি আপলোড করা যাবে মে মাসজুড়ে। প্রতিযোগিতাটি চলতি মাসের ১ তারিখ শুরু হয়েছে, চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশ থেকে প্রাপ্ত সেরা ১০টি করে ছবি থেকে আন্তর্জাতিক বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। আন্তর্জাতিকভাবে সেরা ১০টি ছবিকে পুরস্কৃতও করা হবে। প্রথম পুরস্কার বিজয়ী ২০১৯ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠেয় উইকিপিডিয়ার বার্ষিক সম্মেলন ‘উইকিম্যানিয়ায়’ যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত ছবিগুলো থেকেও সেরা ছবিগুলোকে পুরস্কৃত করা হবে।

 

এ আয়োজন নিয়ে গত বছর থেকেই কাজ করছেন উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ সুলতান। চলতি বছর তিনি প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্বের সমন্বয়কও। বললেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যান, বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যগুলোর নিবন্ধ উইকিপিডিয়াতে থাকলেও বেশির ভাগেরই কোনো ছবি নেই। এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক অঞ্চলের ছবিগুলোর একটি স্থায়ী সংগ্রহশালা তৈরি করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।’ উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের সভাপতি শাবাব মুস্তাফা জানান, ‘একটা ধারাবাহিক বার্ষিক প্রতিযোগিতা যার মাধ্যমে আমাদের দেশের সংরক্ষিত অঞ্চলের কথা সারা বিশ্বের মাঝে তুলে ধরতে পারি।’ বাংলাদেশের নানা তথ্য পাওয়া যাবে ডাব্লিউএলইর ফেইসবুক পেইজ (www.facebook.com/WLEBangladesh)  এবং টুইটার (www.twitter.com/WLEBangladesh) পেইজে।

 

পুরুষ ময়ূর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক। আলোকচিত্রী: আজিম খান রনি, সিসি-বাই-এসএ৪.০

 

যেভাবে ছবি আপলোড করা যাবে

প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণের জন্য  www.wikiloves.org/earth-এ ঠিকানায় গিয়ে ছবি আপলোড করতে হবে। এ ঠিকানায় সংরক্ষিত এলাকাগুলোর তালিকা দেওয়া আছে। শুরুতে উইকিমিডিয়া কমন্সে প্রবেশ করে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এরপর যে ছবিটি আপলোড করতে চান ব্যবহারকারী সেটির একটি সঠিক নাম দিতে হবে। যত খুশি তত ছবি আপলোড করতে তালিকায় থাকা স্থানের নামগুলোতে ক্লিক করতে হবে। প্রতিটি স্থানের পাশে আপলোড করার বোতামটি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ যে যে স্থানের ছবি আপলোড করতে চান ব্যবহারকারী সেই সেই স্থানের ছবি নামের পাশে আপলোড অপশনে গিয়ে ছবিটি আপলোড করতে হবে। ছবি আপলোড করে চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার আপলোডের সাফল্যের কথা শেয়ারও করতে পারা যাবে #wleBangladesh হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে। ছবি আপলোডের ক্ষেত্রে রয়েছে কিছু শর্তও। আগ্রহী আপলোডকারীর সব ছবি অবশ্যই আপনার নিজস্ব কাজ হতে হবে। জলছাপযুক্ত ছবি প্রতিযোগিতায় গ্রহণযোগ্য নয়। ছবি বছরের যেকোনো সময়ের তোলা হলেও সব ছবি চলতি বছরের আয়োজনের জন্য চলতি মাসের মধ্যেই আপলোড করা হতে হবে। শুধু এ মাসের মধ্যেই আপলোডকৃত ছবিগুলোই প্রতিযোগিতায় গণ্য করা হবে। সব ছবি অবশ্যই উন্মুক্ত লাইসেন্স ক্রিয়েটিভ কমন্স ৪.০, যা সংক্ষেপে ‘সিসি বাই-এসএ ৪.০’ নামে পরিচিত লাইসেন্সে থাকবে। এর মানে হচ্ছে এসব ছবি যেকোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে। তবে আলোকচিত্রী নাম উল্লেখ করতে হবে। অংশগ্রহণকারীর অবশ্যই একটি সক্রিয় ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে, যাতে প্রয়োজনে আয়োজকরা যোগাযোগ করতে পারেন।

 

প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সহ-সমন্বয়ক ও বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রশাসক নুরুন্নবী চৌধুরী (হাছিব) বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয়বারের মতো এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছি। গত বছরই প্রথমবারের মতো এ আয়োজনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ এবং আমাদের একটি ছবি ১১তম স্থান দখল করেছিল।’ চলতি বছরও ধারাবাহিকভাবে এ আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংরক্ষিত এলাকাগুলোর দারুণ সব ছবি উন্মুক্তভাবে তুলে ধরা যাবে বলেও আশাবাদী তিনি। তবে একটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বও দিলেন তিনি। বললেন, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। এ প্রতিযোগিতায় শুধু সংরক্ষিত যেসব এলাকার তালিকা দেওয়া আছে, সেসব এলাকার ছবিই আপলোড করা যাবে। অন্য কোনো স্থান বা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয় এমন ছবি প্রতিযোগিতার জন্য যোগ্য হবে না।

 

প্রথমবারেই বাংলাদেশের সাফল্য

আগেই বলা হয়েছে, গত বছর প্রথমবারের মতো ডাব্লিউএলই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বাংলাদেশ। আর প্রথমবারেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের একটি ছবি সারা বিশ্বের ৩৬টি দেশের এক লাখ ৩১ হাজার ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ১১তম স্থান দখল করেছিল। ছবিটি তুলেছিলেন পল্লব কবির। প্রথমবারের অংশগ্রহণে ১৯১ জন ব্যবহারকারী প্রায় দুই হাজার ছবি আপলোড করেছিলেন। গত বছরের সেরা ১০টি ছবি দেখা যাবে https://commons.wikimedia.org/wiki/Commons:Wiki_Loves_Earth_2017_in_Bangladesh/Winning_photos ঠিকানায়। এ ছাড়া ডাব্লিউএলই ২০১৭ সালের সেরা সব ছবি দেখা যাবে https://commons.wikimedia.org/wiki/Commons:Wiki_Loves_Earth_2017/Winners ঠিকানায়।

 

ছবি তোলা যাবে এসব অঞ্চলের

সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যান

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান

মধুপুর জাতীয় উদ্যান

রামসাগর জাতীয় উদ্যান

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান

নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান

মেধা কচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান

বাড়ৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান

কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান

নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান

সিংড়া জাতীয় উদ্যান

কাদিগড় জাতীয় উদ্যান

আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান

বীরগঞ্জ জাতীয় উদ্যান

 

সংরক্ষিত বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

রেমাকালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

চর কুকরি-মুকরি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

সুন্দরবন পূর্ব বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

সুন্দরবন পশ্চিম বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

সুন্দরবন দক্ষিণ বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

পাবলাখালী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

চুনাতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

ফাসিয়াখালী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

হাজারিখিল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

সাঙ্গু বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

টেকনাফ বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

টেংরাগিরি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

দুধমুখী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

চাঁদপাই বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

ঢাংমারী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

সোনারচর বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

নাজিরগঞ্জ শুশুক অভয়ারণ্য

শিলন্দা-নাগডেমড়া শুশুক অভয়ারণ্য

নগরবাড়ী-মোহনগঞ্জ শুশুক অভয়ারণ্য

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড মেরিন সংরক্ষিত এলাকা

 

বাংলাদেশের অন্যান্য সংরক্ষিত অঞ্চল

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ

বলধা গার্ডেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক

মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক

বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক, সীতাকুণ্ড

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

মধুটিলা ইকোপার্ক

বাঁশখালী ইকোপার্ক

কুয়াকাটা ইকোপার্ক

টিলাগড় ইকোপার্ক

বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক

মুড়াইছড়া ইকোপার্ক

অরুণিমা ইকোপার্ক

যমুনা সেতু পশ্চিম পার ইকোপার্ক

পিরোজপুর রিভারভিউ ইকোপার্ক

চর মুগুরিয়া ইকোপার্ক

শেখ রাসেল পক্ষিশালা এবং ইকোপার্ক

রাতারগুল জলাবন।

 

সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ

ছবিঃ সংগৃহীত