গ্যালারি কায়ার ‘ফোরটিনথ অ্যানিভার্সারি এক্সিবিশন’

গ্যালারি কায়ার ‘ফোরটিনথ অ্যানিভার্সারি এক্সিবিশন’

চিত্র প্রদর্শনী দিয়েই আর্ট গ্যালারির যাত্রা শুরু হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন সেই প্রদর্শনীতে দেশের সেরা শিল্পীদের ছবি থাকে, আর প্রথম প্রদর্শনীর নামই হয় ‘উদ্বোধন’, তখন তা শিল্পরসিকদের মনোযোগ দাবি করে। ১৪ বছর আগে ২০০৪ সালের ২৮ মে উত্তরায় গ্যালারি কায়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুধু মনোযোগ কাড়েনি, বরং সাড়া ফেলেছিল দেশের শিল্পরসিকদের মধ্যে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত।

 

উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে নিরিবিলি পরিবেশে নান্দনিক গ্যালারির গৃহ প্রবেশের আয়োজনও ছিল ব্যতিক্রমী। দেশের দুই বরেণ্য শিল্পী মুর্তজা বশীর আর মনিরুল ইসলামের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস হাতুড়ি দিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে সূচনা করেন গ্যালারি কায়ার পথচলা। সেই ঘণ্টা বাজানোর পর কেটে যায় ১৪ বছর। সময়ের সঙ্গে ঢাকা-উত্তরের এই গ্যালারি হয়ে উঠেছে শিল্পপ্রেমী আর শিল্পবোদ্ধাদের অন্যতম ‘ভালো লাগা’র গন্তব্যস্থল।

 

নতুন খবর হলো, আগামী শুক্রবার প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর উদ্‌যাপন করবে গ্যালারি কায়া। এ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ও ভারতের আধুনিক ও সমসাময়িক ৩৮ জন শিল্পীর ৬৫টি শিল্পকর্ম নিয়ে ‘ফোরটিনথ অ্যানিভার্সারি এক্সিবিশন’ শিরোনামের এক যৌথ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। নির্দিষ্ট কোনো প্রধান বা বিশেষ অতিথি নেই উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায়; বরং সব শিল্পী, শিল্প সংগ্রাহক এবং দর্শক মিলে উদ্বোধন করবেন এই প্রদর্শনী। তা-ই জানালেন গ্যালারি কায়ার উদ্যোক্তা চিত্রশিল্পী গৌতম চক্রবর্তী।

 

উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিত্রকর মকবুল ফিদা হুসেনের (১৯১৫-২০১১) ‘মা’ চিত্রকর্ম দেখা যাবে প্রদর্শনীতে

 

 

উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিত্রকর মকবুল ফিদা হুসেনের (১৯১৫-২০১১) ‘মা’ চিত্রকর্ম দেখা যাবে প্রদর্শনীতেপ্রথম আলোকে গৌতম চক্রবর্তী জানান, এবারের প্রদর্শনীর বিশেষ আকর্ষণ উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিত্রকর মকবুল ফিদা হুসেন, বাংলাদেশের প্রয়াত শিল্পী নিতুন কুন্ডু, বিজন চৌধুরী, দেবদাস চক্রবর্তী, হামিদুর রহমানের আঁকা নানা ছবি। প্রদর্শনীতে স্থান পাবে রফিকুন নবী, হাশেম খান, হামিদুজ্জামান খান, আবদুস শাকুর শাহ, আহমেদ শামসুদ্দোহা, অজিত শীল, আলপ্তগীন তুষার, আনিসুজ্জামান, আশরাফুল হাসান, গৌতম চক্রবর্তী, জামাল আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, নাজলী নায়লা মনসুর, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, চন্দ্রশেখর দে, অতীন বসাক, অতুল দোদিয়া, শম্ভু আচার্য, রতন মজুমদারের ছবি।

 

এই ছবিগুলো ১৯৫৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আঁকা। অর্ধশতকের বেশি সময়জুড়ে রং আর ক্যানভাসে কত ধরনের বিপ্লব হয়ে গেল, তারই সংস্পর্শে আসার এক দুর্লভ সুযোগ ঘটবে প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখলে।

 

 

গৌতম চক্রবর্তী জানালেন, শিল্প আন্দোলনের নানা বৈচিত্র্য আনার জন্যই এই বিশাল কালপর্ব বেছে নেওয়া হয়েছে। ৬৫টি শিল্পকর্মের মধ্যে অয়েল, অ্যাক্রেলিক, চারকোল, ইনক, পেন, ইন্ডিজেনিয়াস পিগমেন্ট, এচিং অ্যান্ড অ্যাকুয়াটিন্ট, লিথোগ্রাফি, অফসেট লিথোগ্রাফ, সেরিগ্রাফ, চিনকোলে, রিলিফ প্রসেস, উড কাট, ওয়াটার কালার ও মিশ্র মাধ্যমে আঁকা ছবি রয়েছে।

 

মুর্তজা বশীরে ল্যান্ডস্কেপ

 

 

মুর্তজা বশীরে ল্যান্ডস্কেপ১৪ বছরের পথচলায় কায়ায় একক এবং দলীয় মিলে ১০১টি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে একক ৬০টি এবং দলীয় ৪১টি। মুর্তজা বশীরের ১২টি ড্রয়িংয়ের ছাপচিত্র নিয়ে ‘হোমেজ টু মাই লেডি’-এ শিরোনামে ফোলিও প্রকাশ করেছে কায়া। এ ছাড়া দেশে ৪টি এবং বিদেশে ২টি আর্ট ক্যাম্প, ৪টি আর্ট ওয়ার্কশপ এবং দেশে ১টি এবং বিদেশে ৬টি আর্ট ট্রিপের আয়োজন করা হয়েছে। শিল্পী মুর্তজা বশীর, মনিরুল ইসলাম ও ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে শফিউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ কিবরিয়া, দেবদাস চক্রবর্তী, আমিনুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, কাইয়ুম চৌধুরী, নিতুন কুন্ডু, সমরজিৎ রায়চৌধুরী, রফিকুন নবী, মাহমুদুল হক, সৈয়দ আবদুল্লাহ খালেদ, মনিরুল ইসলাম, কাজী গিয়াস, হামিদুজ্জামান খানসহ দেশের খ্যাতিমান ৫৩ জন ৫৩টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছিল।

 

 

ওই প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ শিল্পী মুর্তজা বশীর। তিনি কায়ার উদ্যোক্তা পরিচালক শিল্পী গৌতম চক্রবর্তীর বাবা দেশের বরেণ্য শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তীর বন্ধু। সেদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মৃতি রোমন্থন করে মুর্তজা বশীর বলেছিলেন, ‘বাবার পুরোনো ব্রাশ আর রং নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই গৌতমের সৃজনশীলতার হাতে খড়ি। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তাঁর শিল্প আর শিল্পীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’

 

 

রফিকুন নবীর ‘টোকাই’

 

 

রফিকুন নবীর ‘টোকাই’১৪ বছরের ভ্রমণের স্মৃতিচারণা করে গ্যালারি কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রথম দিকে একটু সন্দিহান ছিলাম। শহরের কেন্দ্র থেকে এত দূরে আমাদের গ্যালারি। যানজট ঠেলে শিল্পবোদ্ধা, সংগ্রাহকেরা আসবেন কি না। কিন্তু প্রথম থেকে এই গ্যালারিতে আমরা শিল্পীদের অভূতপূর্ব এক সাড়া পেয়েছি। ১৪ বছরের যাত্রাপথে আমরা সুচিন্তিতভাবে প্রতিটি প্রদর্শনী সাজিয়েছি। গ্যালারি কায়া ক্রমেই শিল্পপ্রেমীদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্যস্থলে পরিণত হয়েছে। দূরত্ব কোনো ব্যাপার হয়নি।’

 

 

আগামী পরিকল্পনার ব্যাপারে গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘সম্প্রতি রাজধানীর রায়েরবাজারে গ্যালারি কায়া একটি ছাপচিত্র স্টুডিও খুলেছে। এ ছাড়া আগামী বছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত গ্যালারি কায়া যেসব প্রদর্শনী করবে, তার একটা শিডিউল তৈরি করা হয়েছে। সেই শিডিউল অনুসারে ক্যাটালগ ছাপানোসহ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছি আমরা।’এডিএন গ্রুপ গ্যালারি কায়ার গত চার বছরের প্রায় সব কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবার অনুষ্ঠেয় ‘ফোরটিনথ অ্যানিভার্সারি এক্সিবিশন’ প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ প্রদর্শনী দেখার জন্য ১২ আগস্ট পর্যন্ত যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে, নিরিবিলি পরিবেশে এই নান্দনিক গ্যালারিতে।

 

 

নাজলী নায়লা মনসুরের ‘দোলনচাঁপা’

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নাজলী নায়লা মনসুরের ‘দোলনচাঁপা’

 

 

 

শিল্পী সোহাগ পারভেজের ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’

সোহাগ পারভেজের ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’

 

 

 

সূত্র ও ছবিঃ দৈনিক প্রথম আলো